দলিল জালিয়াতির মামলায় দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আখতারুজ্জামান জেল হাজতে

গোলাম মোস্তফা, বিশেষ প্রতিনিধি :

দলিল জালিয়াতির মামলায় চাঁদপুর সদর উপজেলা দলিল লেখক সমিতির নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক আখতারুজ্জামান গত ১২ মাচ আদালতে হাজিরা গেলে আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করে।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, চাঁদপুর সদর উপজেলার ৫নং রামপুর ইউনিয়নের ছোট সুন্দর গ্রামের মোঃ রবিউল আলম পিতা মৃত আব্দুল মজিদ মিয়া ২০০১ সালে জীবন জীবিকা নির্বাহের কারণে প্রবাসে চলে যায় এরপর তিনি দীর্ঘ ১৫ বছর যাবৎ প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে আসে। দেশে আসার পর তিনি লোকমুখে শুনতে পারেন এবং তিনি নিজেও সশরীরে উপস্থিত হয়ে দেখেন তার দখলীয় সম্পত্তি মৌজা নং- ৬৩ হাল মৌজা -৭৫, সিএস খতিয়ান-৩৬, এস খতিয়ান – ৩২, সিএস ও এস এ দাগ ৩৫২ ও ৩৬০, বিএস খতিয়ান -৪৩৯,বিএস দাগ -৫৭৭। জমির পরিমাণ ১৫ শতাংশ। স্থানীয় একই গ্রামের আঃ রাজ্জাক সরদার দখল করে রেখেছেন।

http://picasion.com/

এমতাবস্থায় তিনি তাকে বারবার জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান এ সম্পত্তি ক্রয় মূল্যে মালিক হয়েছেন। এ কথা শোনার পর তিনি নিজেই হতবাক হয়ে যান। এক পর্যায়ে তিনি তার ভাইবোন ও আত্মীয়স্বজনের সাথে এই বিষয়ে পরামর্শ করে, চাঁদপুরের পুলিশ সুপার বরাবরে এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেন। পুলিশ সুপার অফিস থেকে দখলকারী আব্দুর রাজ্জাক সরদার কে চিঠি দিয়ে ডাকা হলে তিনি তাঁর সম্পত্তি ক্রয়ের দলিল উপস্থাপন করেন। পরবর্তীতে পুলিশ সুপার কার্যালয় থেকে বিষয়টি নিয়ে আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার জন্য বাদী কে পরামর্শ দেন।

সে মোতাবেক আব্দুর রাজ্জাক সরদারের উপস্থাপনাকৃত দলিল গুলোর নকল চেয়ে তিনি সাবরেজিস্টার অফিসে তল্লাশি দিয়ে সম্পওির দুটি দলিল পান। প্রথম দলিলটি হয় ২০১১ সালে করা, যার নং – ১০৭৫৪ /১১ । সেখানে দাতা হিসাবে একই নামের একই গ্রামের মোঃ রবিউল আলম কে দেখানো হয়েছে। উক্ত রবিউল আলম একই গ্রামের হয়ে ভুয়া দাতা সেজে এ সম্পওি মোঃ ইসমাইল হোসেন পিতাঃ আঃ রশিদ সাং চরবাকিলা তাঁর কাছে বিক্রি করেন। প্রথম গ্রহীতা মোঃ ইসমাইল হোসেন অত্যন্ত চতুর হওয়ায় তিনি এ সম্পত্তি ৯০ দিনের মধ্যে হস্তান্তর করে দেন অর্থাৎ তিনি এ সম্পত্তি পার্শ্ববর্তী গ্রামের আঃ রাজ্জাক সরদার পিতাঃ আফসার সরদার সাং আলগী পাচগাও। যার দলিল নং – ১৭৬৪ / ২০১২ বিক্রি করে দেন।

gif maker

এদিকে ভুয়া দলিলদাতা ২০১২ সালের ১৮ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন। এ পরিস্থিতিতে তিনি কোনো উপায়ান্তর না পেয়ে ২০১৯ সালের ৪ নভেম্বর চাঁদপুরের আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। যার নং – ৮৩৩/২০১৯ইং। ধারা- ৪৬৮/৪৭১/৪৬৪/১০৯/৩৪ দন্ড মোতাবেক ভুয়া দাতা ও জাল জালিয়াতির মামলা।

মামলায় তিনি প্রথম দাতা মোঃ ইজমাইল হোসেন, সাজ্জাদুল হক পাটোয়ারী, আব্দুর রাজ্জাক সরদার ও দলিল লেখক আখতারুজ্জামান কে আসামি করে মামলা করেন।

এ মামলা হওয়ার পর পুলিশ মামলার১ নং আসামী ইসমাইল হোসেনকে গ্রেফতার করে পরবর্তীতে এ মামলায় দলিল লেখক আখতারুজ্জামান হাজিরা দিতে গেলে আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করে।
মামলার বাদী পক্ষের সূত্রে জানা যায় উক্ত দলিল দাতা, গ্রহীতা ও দলিল লেখক মোঃ আখতারুজ্জামান সকলেই একই এলাকায় বসবাসকারী। যে কারণে তারা একে অপরের যোগসাজশে জালিয়াতির মাধ্যমে সম্পত্তি আত্মসাৎ করার জন্যই মূলত তারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাই তিনি এ বিষয়ে আইনী প্রতিকার চেয়ে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন।

উল্লেখ্য মোঃ আক্তারুজ্জামান গত ২৯ ফেব্রুয়ারি চাঁদপুর সদর উপজেলা দলিল লেখক সমিতির নির্বাচনে নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি নির্বাচনের পর শপথ শপথের পূর্বেই জালিয়াতির মামলায় জেলহাজতে গিয়েছেন। এছাড়াও চাঁদপুর সদর উপজেলার দলিল লেখক সমিতির বেশ কয়েকজন সদস্য এ দলিল জালিয়াতির ঘটনার আসামি রয়েছেন। এমামলা গুলো চলমান রয়েছে।

এর মধ্যে নব-নির্বাচিত সভাপতির বিরুদ্ধে একটি দলিল জালিয়াতির মামলা রায় পযায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। পুরো সদর উপজেলার বেশ কজন দলিল লেখকের বিরুদ্ধে জাল করে অন্য কে সম্পওির দলিল করে দেওয়ায় জাল দলিলের মামলা রয়েছে। আরো কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশের মধ্য দিয়ে তাদের নাম উন্মোচন করা হবে।