আর্থিক ক্ষতির অর্থ জমা হয়নি সরকারি কোষাগারে

তৃতীয় ও শেষ পর্ব

মো.মজিবুর রহমান রনি :

বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্পে জেলেদের বিকল্প আয়বর্ধনমূলক উপকরণ ক্রয় বিল হতে ভ্যাট কর্তন না করায় লক্ষ লক্ষ টাকা সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এ অর্থ আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমা করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত অর্থ জমা না দেয়নি সংশ্লিষ্টরা।

প্রকল্পের ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের হিসাব নিরিক্ষাকালে দেখা যায়,পুনঃখননকৃত জলাশয়, প্রদর্শনী পুকুর, পেনে মাছচাষ কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য প্রাক্কলন অতিরিক্ত দরে প্রকল্পে দশটি অফিসের মাধ্যমে মাছের খাদ্য পোনা পেনে মাছচাষ খাতে ২৯ টি ভাউচারে ১৮ লক্ষ ৩৬ হাজার টাকা ব্যয় করা হয়।

প্রকল্পে পরিশিষ্ট -৫ অনুযায়ী প্রদর্শনী পুকুরে মাছচাষ কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য মাছের খাদ্য ৫০টাকা দরে ক্রয় করার নির্দেশনা থাকলেও ২হাজার ৫০২ কেজি মাছের খাদ্য ক্রয় করা হয়েছে ৬০ টাকা দরে ,মাছের পোনা ৪টাকা দরে ক্রয় করার নির্দেশনা থাকলেও ৩০ হাজার পোনা ক্রয় করা হয়েছে ৫টাকা দরে।

পরিশিষ্ট- ৬ অনুযায়ী পেনে মাছচাষ কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য টায়ার কর্ড নেট ২৩২ টাকা দরে ক্রয় করার কথা থাকলেও ক্রয় করা হয়েছে ৩০০টাকা দরে। পরিশিষ্ট-১৩ অনুযায়ী পুনঃখননকৃত জলাশয়ে মাছচাষ কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য মাছের খাদ্য ৪৫ টাকা দরে ক্রয়ের নির্দেশনা থাকলেও ক্রয় করা হয়েছে ৫০ টাকা দরে।

প্রাক্কলন অতিরিক্ত দরে মাছের খাদ্য পোনা টায়ার কর্ড নেট ক্রয় করায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩লক্ষ ৭৪হাজার ৬২০টাকা। প্রাক্কলন অতিরিক্ত দরে খাদ্য পোনা টায়ার কর্ড নেট ক্রয় করার কোনো সুযোগ না থাকলেও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা এ ক্ষেত্রে নির্দেশনা লঙ্ঘন করেছে বলে জানা গেছে।

প্রকল্প সূত্রমতে, প্রকল্পের মাধ্যমে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলায় ৬টি বিল ভাউচারে প্রতিটিতে ৪১৭ কেজি হারে মাধ্যমে প্রদর্শনী খামারে মাছের পিলেট খাদ্য ক্রয় করা হয়।জেলার আদর্শ সদর উপজেলার একটি বিল ভাউচারে মাধ্যমে পেনে মাছচাষ কার্যক্রমের উপকরণ ২৯২ মিটার টায়ার কর্ড নেট ক্রয় করা হয়।

চাঁদপুরের মতলবে ৬টি বিল ভাউচারে মাধ্যমে প্রদর্শনী খামারের জন্য ৩০ হাজার পিস মাছের পোনা ক্রয় করা হয়। কুমিল্লার চান্দিনা ও লাকসাম উপজেলায় ৪টি বিলের মাধ্যমে পেনে মাছচাষ কার্যক্রমের উপকরণ ক্রয় করা হয়।চাঁদপুর জেলায় প্রদর্শনী খামারের জন্য ২ হাজার কেজি মাছের খাদ্য ক্রয় করা হয়।

কুমিল্লা জেলার মুরাদনগরে পেনে মাছচাষ কার্যক্রমের জন্য ৫৮৪ মিটার টায়ার কর্ড নেট ক্রয় করা হয়।

বাক্ষ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগরে প্রদর্শনী খামারের মাছের জন্য ৪২০ কেজি খাদ্য ক্রয় করা।একই জেলার নাসিরনগরে পুনঃখননকৃত জলাশয়ে মাছচাষ করার জন্য ৪শ কেজি খাদ্য ক্রয় ও আখাউড়া উপজেলায় পেনে মাছ চাষ কার্যক্রমের উপকরণ ২শ ৯২ মিটার টায়ার কর্ড নেট ক্রয় করা হয়।

আর্থিক ক্ষতির বিবরণী তথ্য অনুযায়ী ৪৭,৫৪,৫৬,০৯,৩২ নম্বর বিল ভাউচারে পেনে মাছচাষ কার্যক্রমের জন্য টায়ার কর্ড নেট ক্রয় ও প্রদর্শনী খামারের জন্য খাদ্য কোন উপজেলার জন্য ক্রয় করা হয়েছে বিবরণীতে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়াও অনুরুপভাবে,প্রকল্প হতে জেলেদের বিকল্প আয়বর্ধনমূলক উপকরণ (এআইজিএ) সহায়তা প্রদানের জন্য সেলাই মেশিন সহ সরঞ্জাম ও ছাগল ক্রয় খাতে ২০টি বিল ভাউচারের মাধ্যমে ৬২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা ব্যয় করা হয়।ভ্যাট কর্তন সংক্রান্ত সেবার খাত অনুযায়ী উপকরণ সরবরাহকারীর বিল হতে ৭.৫ শতাংশ হারে ভ্যাট কর্তন করার নির্দেশনা থাকলেও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট কর্তন করে বিল পরিশোধ করে। ২.৫ শতাংশ হারে ভ্যাট কম কর্তন করায় সরকারের আর্থিক ক্ষতির পরিমান দাঁড়ায় ১ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকা।যা এখন পর্যন্ত সরকারী কোষাগারে জমা দেয়া হয়নি।

এ বিষয়ে প্রকল্পের এক ককর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,ভ্যাটের অর্থ সরকারী কোষাগারে জমা করার প্রস্তুতি চলছে।

প্রকল্প পরিচালক মোঃ আবদুছ সাত্তার প্রকল্পে অনিয়মের কারণে সরকারের আর্থিক ক্ষতি সম্পর্কে মন্তব্য করতে পারবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন।