মুরাদনগরে চাঁদাবাজ কামাল সরকার জেল হাজতে! গৃহকর্তীর কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার: ২১ নভেম্বর ২০২১

গৃহকর্তীর কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগে মুরাদনগরে সাবেক বিএনপি নেতা গোলাম কিবরিয়া সরকারের ভাতিজা কামাল সরকারকে অবশেষে জেল হাজতে পাঠিয়েছে আদালত। কামাল সরকার বাংগরা থানাধীন বলিঘর গ্রামের সরকার বাড়ীর প্রয়াত শফিকুর রহমান ওরফে শহীদ মিয়ার এর ছেলে।

কামাল গত ২০ মার্চ কুমিল্লার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ৮নং আমলী আদালতে হাজির হয়ে একটি চাঁদাবাজী মামলায় জামিন প্রার্থনা করলে বিচারক জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ওমর ফারুক জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এদিকে এ মামলায় অভিযুক্ত অপর চারজনের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত। বাকী অভিযুক্তরা হলেন, রাজাবাড়ী গ্রামের প্রয়াত আবদুল আলীম এর ছেলে আবু ইউসুফ আবন, তার স্ত্রী জানু বেগম, প্রয়াত বজলুর রহমানের ছেলে আমজাদ হোসেন এবং প্রয়াত ফিরোজ মিয়ার ছেলে জামাল মিয়া।

২০২১ সালের ২২ নভেম্বর কামালসহ মোট পাঁচ জনকে অভিযুক্ত করে দন্ডবিধি ৩৮৫ ও ৫০৬ সহ ৫টি ধারা উল্লেখ করে এই চাঁদাবাজী মামলাটি দায়ের করেন একই উপজেলার রাজাবাড়ী গ্রামের মাওলানা আবুল খায়ের মুজিব এর স্ত্রী সালমা আক্তার।

এামলার এজাহারে বাদী সালমা আক্তার উল্লেখ করেন, তার স্বামী মাওলানা আবুল খায়ের ও তার ভাই আবু সাইদ ২০০৯ সালে তাদের একই বাড়ীতে ৮০৪ খতিয়ানভূক্ত ৩২৩৩ দাগে চার শতক ভূমি কেনেন। এই ভূমি থেকে তাদের উচ্ছেদ করতে মিথ্যা মামলা সহ নানা রকম পায়তারা করতে থাকে আবদুল আলীম এর ছেলে আবু ইউসুফ।
বাদী সালমা আক্তার জানান, পাশের বলিঘর গ্রামের সন্ত্রাসী কামাল সরকারের সহযোগিতায় বিগত ৪ বছর যাবৎ আবু ইউসুফ তাদের উপর নানা ভাবে অত্যাচার করে আসছে।

গত ২০২১ সালের ১৬ নভেম্বর রাত ৮টার দিকে কামাল সহ মামলায় অভিযুক্তরা বাদী সালমা আক্তারের কাছে এই জায়গার বিনিময় ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবী এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। এঘটনায় সালমা আদালতে হাজির হয়ে ২২ নভেম্বর মামলাটি দায়ের করেন। মামলাটি আমলে নিয়ে বাংগরা বাজার থানাকে তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারক।

বাংগরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি কামরুজ্জামান তালুকদার উপপরিদর্শক শাহ নেওয়াজকে মামলাটির তদন্তভার দেন। তিনি তদন্ত শেষে আদালতলতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। উপপরিদর্শক শাহ নেওয়াজ জানান, দীর্ঘ তদন্তে এ মামলায় কামাল সরকারের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজীর সাক্ষ্যপ্রমাণ মিলেছে। বাকীদের বিরুদ্ধে সরাসরি চাঁদাবাজীর অভিযোগ পাওয়া না গেলেও ঘটনায় তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তা।

খোঁজ নিয়ে জানাযায়, বিভিন্ন অপরাধে কামাল সরকারের বিরুদ্ধে মুরাদনগর এবং বাংগরা বাজার থানায় অন্তত ২০টি মামলা রয়েছে। যার মধ্যে নাশকতা এবং চাঁদাবাজীসহ কয়েকটি মামলা বর্তমানে বিচারাধীন। তার চাচা সম্পর্কীয় সাবেক বিএনপি নেতা গোলাম কিবরিয়া সরকার কামালকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন। যার দরুণ কামালের অত্যাচারে অতিষ্ঠ বলিঘর সহ আসপাশের অনেক পরিবার।

পাশের রাজাবাড়ী গ্রামের আবু সাইদ ও মাওলানা আবুল খায়ের এর সাথে চাচাত ভাই আবু ইউসুফের জমিজমা সংক্রান্ত চলমান বিরোধে কামাল সবসময় হস্তক্ষেপ করে আসছিলো। অভিযোগ রয়েছে কিবরিয়া সরকারের মদদেই কামাল এসব করছে।

মাওলানা আবুল খায়েরের এবং আবু সাইদ আবু সাইদ বলেন, নিজের ভূমি থেকে গাছ কাটার পরও আমাদের তিন জনকে মিথ্যা মামলায় দিয়ে একটি মাস জেল হাজত খাটানো হয়েছে।

তারা জানান, গত ১৬ সেপ্টেম্বর নিজের যায়গা থেকে একটি কাঠের গাছ বিক্রি করেন আবু সাইদ। এই সুযোগে প্রতিবেশি আবু ইউসুফ (আবন) এই গাছ তার দাবি করে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। রহস্যজনক ভাবে কোনো তদন্ত ছাড়াই বিজ্ঞ বিচারক মামলাটি সরাসরি আমলে নেন। গত ০১ নভেম্বর ২০২১ তারিখে তারা আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইলে বিচারক তাদের তিন জনকে জামিন না মঞ্জুর করে জেলা হাজতে পাঠান।

পরবর্তীতে আবুল খায়ের এর স্ত্রী সালমা বাদী হয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ভুমির বেদখলের পায়তারার অভিযোগে একটি মামলা করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাংগরাবাজার থানার সাবইন্সপেক্টর শাহনেওয়াজ বলেন, আমি আদালতের নির্দেশে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। সাক্ষ্য প্রমাণাদি নিয়ে দেখা গেছে উল্লেখিত ভূমিতে আবু সাইদ ও আবুল খায়েরের দখল বিদ্যমান। এমতাবস্থায় উভয় পক্ষকে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে নোটিশ দিয়েছি এবং এমর্মে আদালতে প্রতিবেদন প্রেরণ করেছি। এর পরও কামাল গংরা সালমার বাড়ীতে এসে চাঁদাবাজীর ঘটনা ঘটায় মর্মে সালমা আদালতে অপর মামলাটি দায়ের করেন।

বাদী সালমার আইনজীবী এডভোকেট এ.এইচ.এম আবাদ বলেন, মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে কামালের চাঁদাবাজীর বিষয়টি উল্লেখ থাকায় জামিন নামঞ্জুর করে তাকে জেল হাজতে পাঠিয়েছেন।

প্রচ্ছদের ছবি: ১- সালমা সাংবাদিকদের সামনে মামলার এজাহার পড়ে শোনাচ্ছেন, পাশে বসা রত্না বেগম। ২- চাঁদাবাজীর অভিযোগে জেল হাজতে যাওয়া কামাল সরকার।